আব্দুর রহমান গিলমান : সম্প্রতি বিতর্কিত পাঠ্যসূচি পুনঃস্থাপন নিয়ে পুনরায় পুসে উঠেছে গোটা দেশ। আসলে ইসলামী শিক্ষা নিয়ে ষড়যন্ত্র তাদের নতুন কিছু নয়। ইসলামের বিরুদ্ধে ইয়াহুদি খ্রিস্টানচক্রের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার এটি একটি অংশ। ইসলাম বিরোধীদের মূল উৎস শিক্ষা। কারণ ভ্রান্ত্র মতবাদ বিকাশে শিক্ষব্যবস্থা এবং কারিকুলাম মৌলিক ভূমিকা রাখে। শিক্ষার মাধ্যমেই তারা একটি জাতিকে ধ্বংস করে দিতে পারে। এই জন্য তারা বারবার শিক্ষাব্যবস্থা ও কারিকুলামের ওপর আক্রমণ করছে। দীর্ঘ দিনের গবেষণায় দেখা গেছে- ইসলামী শিক্ষার ওপর তাদের এই আক্রমণের কারণে শিক্ষাব্যবস্থায় মুসলিম বিশ্বের শিক্ষা কেন্দ্রগুলোতে নিম্নোক্ত পরিবর্তন সাধিত হয়েছে-
১. পাঠদানের ভাষার পরিবর্তন
২. লেখার পদ্ধতির পরিবর্তন
৩. বিদেশি ভাষা বাধ্যতামূলক করণ
৪. দীনের মর্যাদা ক্ষুণ্ন
৫. ধর্মহীনতার বিষয়বস্তু সিলেবাসে অন্তর্ভুক্তি
৬. উলামায়ে কিরাম এবং মাদরাসা ছাত্রদেরকে হেয়প্রতিপন্ন করণ
৭. ধর্মহীন শিক্ষক নিয়োগ
৮. সহশিক্ষা
৯. মাদরাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে অপপ্রচার
১০. দীনি শিক্ষা এবং সমসাময়িক শিক্ষার মাঝে ব্যাপক দূরত্ব সৃষ্টি।
সিলেবাস নিয়ে তাদের ষড়যন্ত্রের কিছু চিত্র-
সিলেবাসে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর অনুপ্রবেশ করানো হয়েছে।
১. পাশ্চাত্য চিন্তা-চেতনার বিকাশ।
২. নাস্তিকতা এবং বস্তুবাদের মানসিকতা তৈরি।
৩. সঠিক ইতিহাস থেকে দূরে রাখা এবং ভুল ইতিহাস শিক্ষা দেওয়া।
৪. পাশ্চাত্য চিন্তার ধারক-বাহকদের দোষ ত্রুটি এবং বাড়াবাড়িকে গোপন করা।
৫. ইসলামকে শুধুমাত্র একটি দার্শনিক বস্তু বানিয়ে দেওয়া।
৬. ভৌগলিক এবং রাজনৈতিক বিভাজনগুলো পুনর্বহাল।
শিক্ষাব্যবস্থার ওপর আক্রমণ
মুসলিম বিশ্বের শিক্ষাব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে নেওয়ার জন্য নিম্নোক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
১. বিশ্বব্যাপী ইউনেস্কো এবং ইউনিসেপ-এর মতো শিক্ষা-সংস্কৃতিমূলক সংস্থার প্রতিষ্ঠা।
২. মুসলিম বিশ্বে পাশ্চাত্য ধারার সংস্থাগুলোর অধীনে শিক্ষক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা।
৩. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিদেশি সহযোগিতা।
৪. মুসলিম বিশ্বের শিক্ষা মন্ত্রণালয়গুলোর ওপর বিদেশি বিশেষজ্ঞদের হস্তক্ষেপ।
৫. মুসলিম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিদেশি শিক্ষক এবং পণ্ডিতদের আসা-যাওয়া।
৬. মেধাবী মুসলিম ছাত্রদেরকে স্কলারশীপ প্রদান।
শিক্ষাব্যবস্থার প্রভাব
সিলেবাসে ষড়যন্ত্র এবং শিক্ষাব্যবস্থায় আক্রমণের ফলে শিক্ষাব্যবস্থায় যে প্রভাব পড়েছে তা হল-
১. মুসলিম ছাত্ররা নামেমাত্র মুসলমান হয়ে থাকল।
২. দীনি শিক্ষার প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি হল।
৩. জাগতিক জ্ঞান এবং দীনি ইলম দুটি পৃথক পৃথক হয়ে গেল।
৪. সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ক্রমান্বয়ে দীন থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।
৫. মুসলমারা তাদের ইলমের উত্তরাধিকারী থেকে একেবারে অপরিচিত হয়ে গেছে।
৬. শিক্ষা, সাহিত্য- সংস্কৃতি এবং রাজনৈতিক নেতৃত্ব পাশ্চাত্যের হাতে চলে গেছে।
৭. দীন এবং দীনের অনুসারীদের টিটকারী করা স্বাভাবিক হয়ে গেছে।
৮. নতুন প্রজন্ম মেধার দিক দিয়ে পাশ্চাত্যের গোলাম হয়ে যাচ্ছে।
তাই আমাদের করণীয় হিসেবে বলতে চাই- মাঠপর্যায়ে আন্দোলনের পাশাপাশি তাদের দীর্ঘমেয়াদী চিন্তাযুদ্ধের মোকাবিলা করার জন্য আমাদেরকেও চিন্তাযুদ্ধের ময়দানেও অবতীর্ণ হতে হবে। এর জন্য কার্যকরী পন্থা খুঁজে বের করতে হবে।
সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি
ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন
Leave a Reply