আইএবি নিউজ : মিয়ানমারের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত অঞ্চলকে নিরাপত্তা জোন হিসেবে ঘোষণা, আরাকানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন, রোহিঙ্গা মুসলমানদের গণহত্যাকারী সামরিক জান্তা ও অং সান সুচির আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার এবং রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার দিয়ে স্বদেশে ফিরিয়ে নেয়ার দাবিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ গতকাল ঢাকাস্থ জাতিসংঘ কার্যালয় অভিমুখে গণমিছিল ও স্মারকলিপি কর্মসূচি পালন করেছে।
আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে বাইতুল মুকাররম উত্তর গেইট সড়কে বিশাল সমাবেশ শেষে ঢাকাস্থ জাতিসংঘ কার্যালয়ে স্মারকলিপি প্রদানের লক্ষ্যে এক দীর্ঘ গণমিছিল বের হয়ে পল্টন মোড়ে পৌঁছলে পুলিশ মিছিলের গতিরোধ করে। এ সময় দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানীর নেতৃত্বে ৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল জাতিসংঘ কার্যালয়ে গিয়ে কান্ট্রি ডিরেক্টরের কাছে স্মারকলিপি হস্তান্তর করেন।
প্রতিনিধিদলে ছিলেন রাজনৈতিক উপদেষ্টা অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কেএম আতিকুর রহমান, দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, উত্তর সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, আলহাজ্ব আব্দুর রহমান।
গণমিছিলপূর্ব বিশাল সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলনের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নিরীহ রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর যে নির্মম গণহত্যা চলছে তা ইতিহাসের সকল বর্বরতাকে হার মানিয়েছে। বিশ্বব্যাপী এই গণহত্যার ধিক্কারের পরেও মিয়ানমারের সামরিক জান্তা তাদের নিষ্ঠুরতা বন্ধ করেনি, তাই রোহিঙ্গা মুসলমানদের রক্ষায় সরকারকে ব্যাপক কুটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত এবং মুসলিম বিশ্বকে নিয়ে আরাকান স্বাধীন করার জন্য সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এ রুপ কোন পদক্ষেপ নিলে দেশের মানুষ সরকারের পাশে থাকবে।
তিনি বলেন, জাতিসংঘ মুসলমানদের পক্ষে বিশেষ করে আফগানিস্তান, ইরাক, কাশ্মীর সমস্যার সমাধানে এ যাবৎ দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ নেয়নি। শুধু বিবৃতি দিয়ে দায়িত্ব শেষ করতে চায়। তিনি বলেন, শুধুমাত্র মুসলমান হওয়ার কারণে নিজ দেশে মিয়ানমার জান্তা তাদের নাগরিকদের উপর এমন নির্মমতা, বর্বরতা, খুন-র্ধষণ, হত্যাযজ্ঞের ইতিহাস পৃথিবীতে নেই।
তিনি বলেন, সুচি যে চরম মিথ্যাবাদী তা বক্তব্যে প্রমাণ করেছে। বাংলাদেশে আগত রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রসঙ্গে পীর সাহেব বলেন, তাদের দু:খ দুর্দশা দেখলে যে কোন মানবাত্মা কেঁদে উঠবে। থাকার ঘর নেই, খাদ্য নেই, খোলা আকাশের নিচে, বৃষ্টিতে ভিজে কাকভেজা অবস্থায় তারা অত্যন্ত মানবেতর জীবন-যাপন করছে। মানবিক কারণেই অনতিবিলম্বে সরকার ও সক্ষম সকলকে তাদের পাশে দাড়ানো উচিত। অন্যথায় কুতুপালং, বালুখালী, লেদা ক্যাম্প, শাহপরী দীপসহ অন্যান্য এলাকায় অবস্থানরত শরণার্থীদের মাঝে মানবিক বিপর্যয় ঘটবে। এতে শিশুসহ হাজার হাজার মানুষ রোহিঙ্গা শরণার্থী মৃত্যুবরণ করবে।
সমাবেশে অধ্যক্ষ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী বলেন, রোহিঙ্গা মুসলমানদের নির্মম গণহত্যা বন্ধ না হলে আরাকান স্বাধীন করতে জিহাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। খুনি অং সান সুচির বিচার আন্তর্জাতিকভাবে করতে হবে। বিশ্ব মুসলমানের স্বার্থেই সুচির বিচার হতে হবে। সন্ত্রাসী পিতার সন্ত্রাসী মেয়েই হচ্ছে অংসান সূচী, তার পিতাও রোহিঙ্গা মুসলমানদের রক্ত নিয়ে হোলি খেলা খেলে গেছে। অংসান সূচীর এই হোলি খেলা বন্ধ না হলে আরাকান স্বাধীন করতে এদেশে মুসলমানেরা মিয়ানমার যেতে প্রস্তুত রয়েছে।
সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, উত্তর সভাপতি শেখ ফজলে বারী মাসউদ, প্রচার সম্পাদক মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম, শ্রমিকনেতা মুহাম্মদ খরিলুর রহমান, আলহাজ্ব আলতাফ হোসেন, মাওলানা আরিফুল ইসলাম, যুবনেতা মাওলানা আজিজুল হক ও শেখ মাওলানা নূরউন নাবী, মাওলানা এইচ এম সাইফুল ইসলাম, অধ্যাপক ফজলুল হক মৃধা, মুফতি মাউদুর রহমান চাঁদপুরি প্রমূখ।
অধ্যাপক এটিএম হেমায়েত উদ্দিন বলেন, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানরা তাদের দু:খ দুর্দশা সহ্য করার মত নয়। আরাকানকে স্বাধীন করে তাদের সমস্যার সমাধান করতে হবে। তিনি আরব বিশ্বের নিরবতার সমালোচনা করে বলেন, আপনারা শুধু আলখেল্লাই পরা শিখলেন। আর কিছু করতে পারলেন না। মিয়ানমারের পাশে দাড়ান না হলে আল্লাহর দরবারের জবাব দিতে হবে।
মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, মিয়ানমারের সমস্যা দীর্ঘদিনের সমস্যা। এ সমস্যা সমাধানে বিশ্ব মুসলিমকে ঐক্যবদ্ধভাবে চাপ প্রয়োগ করতে হবে। তিনি বলেন, মিয়ানমারের সামরিক জান্তারা নিজ দেশের জনগণের উপর বর্বরতার দৃশ্য বিশ্ববাসী আর দেখেনি।
Leave a Reply